চাঁদটা কেন বাড়ে কমে…’

জোছনারাতে আকাশের দিকে চোখ রেখে ভরা চাঁদকে দেখে মুগ্ধ হয়নি এরকম মানুষ
পৃথিবীতে নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু মজার কথা হচ্ছে, চাঁদ নিয়ে যদি খুব সহজ কিছু জিজ্ঞাসা করা যায়, দেখা যাবে বেশিরভাগ মানুষ পারছে না । বিশ্বাস না হলে এখনই আপনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন!
আমরা অনেকেই কিছু-কিছু জানি যে, পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা হয় চাঁদের আকর্ষণের জন্যে। চাঁদ যখন পৃথিবীর পানিকে আকর্ষণ করে পানিটা চাঁদের দিকে ফুলে ওঠে, আমরা সেটাকেই বলি জোয়ার। পানি ফুলে ওঠার জন্যে পানি যেখান থেকে চলে যায় আমরা সেটাকে বলি ভাটা। আকাশের দিকে তাকালে আমরা দেখি, চাঁদের পৃথিবীটা ঘুরতে চবিবশ ঘণ্টা সময় লাগে – তাহলে প্রতি চবিবশ ঘণ্টায় একটা জোয়ার ও একটা ভাটা হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা যারা সমুদ্রের কাছাকাছি গিয়েছি, তারা প্রতেকে জানি চবিবশ ঘণ্টায় দুটো জোয়ার এবং দুটো ভাটা হয়। কারণটা কী? কিংবা সহজ প্রশ্ন করা যেতে পারে, আমরা যখনই পূর্ণিমায় পুরো চাঁদটি দেখি তখন আমরা চাঁদের একটা নির্দিষ্ট পৃষ্ঠ দেখতে পাই, চাঁদের উলটো পিঠটা কখনো দেখি না। কিন্তু এটা সত্যি কথা যে, পৃথিবী যেরকম তার অক্ষে ঘুরছে (যেটার নাম আহ্নিক গতি), চাঁদ তার অক্ষে ঘুরছে; তাহলে কখনোই ঘুরমত্ম চাঁদের পুরোটুকু কেন আমরা দেখি না? কিংবা আরো সহজ প্রশ্ন করতে পারি, চন্দ্রগ্রহণ হয় পূর্ণিমাতে সূর্যগ্রহণ হয় অমাবস্যাতে – তার কারণটা কী? কিংবা কাছাকাছি একটা প্রশ্ন, অমাবস্যার অদৃশ্য চাঁদ ধীরে-ধীরে বড় হয়ে কেমন করে পূর্ণিমার ভরা চাঁদ হয়, আবার পূর্ণিমার ভরা চাঁদ কেমন করে ছোট হতে-হতে একেবারে অদৃশ্য হয়ে অমাবস্যার চাঁদ হয় ? যারা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানে, তাদের এ-লেখাটি পড়ে সময় নষ্ট করার কোনো দরকার নেই। কিন্তু যারা জানে না, তারা যদি উত্তরগুলো জেনে নেয় তাহলে পরেরবার চাঁদের দিকে তাকালে তাদের আনন্দ মহরত আরো অনেকগুণ বেড়ে যাবে!
প্রথম যে-বিষয়টা সবার জানতে হবে সেটি হচ্ছে, চাঁদ হল গোলাকার এবং সেটা কখনো সরম্ন
হতে-হতে অদৃশ্য হয়ে যায় না, সবসময়েই গোলকই থাকে। চাঁদের পিছন থেকে সূর্যের আলোটা এসে পড়ে সেটাকে দেখা যায় না, পাশ থেকে আলো পড়লে কিছুটা দেখা যায় আর সামনে থেকে আলো পড়লে পুরোটা দেখা যায়। তাই কোথা থেকে সূর্যের আলোটা আসছে তার ওপর নির্ভর করবে চাঁদটা কত বড় দেখাবে। বিষয়টা মোটামুটি সাধারন, আলাদা করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই; কিন্তু তারপরও বলে দেওয়া ভালো। কারণ অনেক দেশ সেটা কখনো জানে না এবং তারা তাদের জাতীয় পতাকাকে কাসেত্মর মতো সরম্ন চাঁদ এবং তার পেটের মাঝে একটা তারা এঁকে রাখে – পাকিসত্মান হচ্ছে তার উদাহরণ, যেসব রাষ্ট্র একটু বিজ্ঞান সম্মত তারা চাঁদটাকে গোলক হিসেবেই জানে এবং তারাটা চাঁদের পেটের ভেতর বসায় না – বাইরে বসায়। তুরস্কের জাতীয় পতাকা হচ্ছে তার উদাহরণ।
পৃথিবী থেকে আমরা কখনো পুরো চাঁদকে দেখার সুযোগ পাই, কখনো আংশিক দেখার সুযোগ পাই, কখনো একটুও দেখতে পাই না তার কারণ – চাঁদটা স্থির নয়, এটা পৃথিবীর চারে দিকে ঘুরছে। একটা স্কুলের ছেলে কিংবা মেয়েও হিসাব করে ফেলতে পারবে যে, চাঁদকে পৃথিবীটা পুরোপুরি ঘুরে আসতে সময় নেবে সাতাশ দিন। পৃথিবীটাও যেহেতু স্থির নেই, সেটিও সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে তাই সেটা সরে যায়। এ কারণে চাঁদকে আরো খানিকটা বাড়তি দুরুতে ঘুরতে হয়, তাই পৃথিবী থেকে আমাদের মনে হয় পুরো পৃথিবী ঘুরে আসতে চাঁদ সময় নেয় সাড়ে ঊনত্রিশ দিন।