ইলিশ মাছ (Ilish)কেন সার্বজনীন উৎসবের প্রধান খাবার?
ইলিশ মাছ। আজ পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর প্রাণের প্রধান উৎসব। ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত আমরা বাঙালিরা। কখনো মাছে-ভাতে বাঙালি আবার কখনো সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা , কখনো নদীমাতৃক দেশ ।
আবার কখনো বলা হয় হাজার রঙিন উপাদানে সমৃদ্ধ আমাদের সংস্কৃতি ।
ইলিশ মাছের ছবি।

সারা বছর কোনো না কোনো উৎসব নিয়ে আমরা বাঙ্গালিরা মেতে উঠি । তেমনই এক উৎসব হল “পহেলা বৈশাখ”। আজ সবাই গেয়ে উঠবো “এসো হে বৈশাখ , এসো এসো”।
ইলিশ মাছ বৈশাখ দিনের অন্যতম উপাদান হয়ে উঠেছে ইলিশ আর পান্তা । শহুরে মানুষেরা অনেক ঘটা করেই পান্তা ইলিশের আয়োজন করে থাকে। নিজেকে বাঙালি প্রমাণ করার জন্য সব চাইতে ভালো প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যেটা পান্তা – ইলিশ।
তাই আজ বৈশাখের এই প্রথম দিনে ইলিশ মাছ সাথে পান্তা খেতেই হবে, না হলে বাঙালিয়ানাই বৃথা । অন্যদিকে গ্রামের খেঁটে খাওয়া মানুষ গুলো প্রতিদিন সকালে উঠে পান্তা ভাত খেয়ে ক্ষেত খামারে কাজ করতে যাচ্ছে, তফাৎ শুধু ইলিশ নিয়ে ।
সার্বজনীন উৎসবগুলো খাবার এমন হওয়া উচিত ছিল যাতে আর্থের দিক থেকে সব শ্রেণীর মানুষেরই তা গ্রহণের সামর্থ থাকে ।
কিন্তু পহেলা বৈশাখের প্রধান খাবার যদি হয় ইলিশ পান্তা থাকে আর সে উৎসব যদি সার্বজনীন উৎসব হিসেবে বলার চেষ্টা করে থাকে তাহলে বাংলাদেশের অধিকাংশ বেশি ভাগ মানুষের জন্য তা অবশ্যই পরিহাসের।
কারণ এই উৎসবের প্রধান খাবারটা থাকে তা দেশের বেশির ভাগ মানুষের সামর্থ্য থাকে না । এই প্রেক্ষাপটে কি করে এটা সার্বজনীন উৎসব হলা হয়?
ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা।
যতদূর জানা গেছে, পহেলা বৈশাখ উদযাপনে পান্তা ইলিশ খাবার খাওয়া শুরু হয় ১৯৮৩ সাল থেকে এবং তা রমনার বটমূলে, এই উদ্যোক্তা ছিলেন সাংবাদিক বোরহান আহমেদ।
পহেলা বৈশাখ উদযাপনের কোন ঐতিহ্য বা কোন সংস্কৃতি থেকে এ ধরণের খেয়ালী চিন্তার কথা উদ্ভব তা জানিনা। এমনকি লেখাও চোখে পড়েছে যেখানে,
পান্তা ইলিশের উদ্যোগের ইতিহাসের রচনা করা হয়েছে অত্যন্ত দম্ভ ভরে, যেন এটি এক বিশাল মহান কাজ।
যা বাংলা সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ আর সেই সাথে বাঙালীকে করেছে ধন্য।
কিন্তু ইতিহাস কথা বলছে, পহেলা বৈশাখ উৎসবের সাথে পান্তা, ইলিশ খাওয়ার কথা কোন জায়গাই লিখা নেই-ই, বরং এক ধরণের বৈপরীত্য রয়েছে। তাছাড়া ইলিশ হচ্ছে একটি অভিজাত মাছ।
এই মাছ সারাদেশের জাতিকে আন্তর্জাতিকভাবে গৌরবান্বিত করেছে। যে মাছ সম্মানিত মেহমানদের আপ্যায়ন করার অন্যতম একটি উপাদান।
এর সাথে বাধ্য হয়ে খাওয়া পান্তা ভাতকে অপূর্ব সমন্বয় করে বাঙালী জাতি সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার এই নিদারুণ উন্মাদনা সত্যিই মানুষকে ব্যথিত করে। ভাবিতে করে এই দৈন্য দশা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে। ইলিশ মাছের খবর।
আমরা দিনের পর দিন শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি । কিন্তু আমরা একবারও মনে করছি না যে শেকড় নড়বড়ে হয়ে গেলে যে আমাদের অস্তিত্বও যে হারিয়ে যাবে ।
শহুরে যান্ত্রিকতায় গা এলিয়ে না দিয়ে আমাদের সবাইকে ভাবা উচিত এখানে কতটুকু নির্ভরতা আছে ? কবি গুরু রবি ঠাকুর অনেক আগেই একটা কথা বলে গেছেন –
“সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙ্গালি করে, মানুষ করনি। আর কবেই আমরা মানুষ হতে পারব?